সোনার দুল বিক্রি করে শুরু করেছিলেন রান্নাঘর, স্টেশনের ক্ষুধার্তদের মুখে তুলে দেন ভাত-ডাল

Prathamalorbarta
By -
0

যখন পুরো শহর অন্ধকারে ঢাকা,, চারপাশ নিস্তব্ধ মানুষ তখনও ঘুমিয়ে। অথচ কাটোয়ার কলেজপাড়ায় ভোর হতেই জেগে ওঠে একটি রান্নাঘর। সেখানে একজন মহিলা আগুন ধরান চুলায়, চাল ফুটতে থাকে হাঁড়িতে, ডাল ফুটতে থাকে কড়াইতে। না এই রান্নাঘর তাঁর পরিবারের জন্য নয়, প্রতিটা দিন প্রতিটা রাত একটু খাবারের জন্য যাদের দিন, লড়াই করে কেটে যায় সেই স্টেশনের নিরাশ্রয় মানুষগুলোর জন্যই তিনি পাঁচ মাস ধরে একা হাতেই যোগাচ্ছেন ভালবাসার অন্ন। তিনি হলেন কাটোয়ার অনুপ্রেরণা এবং মানবিকতার আরেক নাম - কাজুলী বিশ্বাস। 



তিনি সাধারণ গৃহবধূ। সংসারের কাজ ও হিসেব-নিকেশেই তাঁর দিন কাটে। তাঁর স্বামী অমল বিশ্বাস কাজ করেন কলকাতায়, তাঁর ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। খুব অল্প আয়েই সংসার চলে তাঁর। সংসারে টানাটানির মধ্যেও মন কাঁদতো  কাজুলী দেবীর, যখন তিনি দেখতেন স্টেশনের সেই না খেতে পাওয়া মানুষদের। আর সেই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরেই বিক্রি করলেন নিজের সোনার দুল। এরপর থেকেই শুরু হলো তাঁর নতুন লড়াই - মানুষের জন্য মানুষের লড়াই, মানবিকতা বাঁচিয়ে রাখার লড়াই। 
প্রথম দিন রান্না করে বেরিয়ে পড়লেন স্টেশনের দিকে, হাতে খাবারের ব্যাগ চোখে কেবল তাঁর একটাই স্বপ্ন - স্টেশনের কোনো মানুষকে যেন ক্ষুধার যন্ত্রণায় না কাতরাতে হয়। 


পাঁচ মাস কেটে গেছে, প্রতিদিন একাই রান্না করেন, আর খরচ চালান নিজের টেলারিং এর টাকা দিয়ে। তারপর পৌঁছে দেন সেই খাবার, যার জন্য স্টেশনের প্রতিটি কোণে বসে থাকে অজস্র চেনা মুখ। তাঁদের কাছে এই খাবার শুধুমাত্র ভাত-ডাল নয়, এটি ভালোবাসা। কাজুলি দেবীর কাছে সেটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড়ো পুরস্কার।
কাজুলি দেবীর কথায়, "কোনো ক্ষুধার্ত মানুষ যদি হাসতে পারে আমার রান্নায়, তার চেয়ে বড়ো কিছুই হতে পারে না আমার জীবনে।
তাঁর এই জীবনের গল্প মানবিকতার প্রচার চায় না, ক্যামেরার আলোও চায় না, চায় শুধু আন্তরিকতার ছোঁয়া।

কাজুলি দেবীর এই নিঃশব্দ সংগ্রাম নিঃসন্দেহে এক বিপ্লব। শহরে প্রতিদিন মানুষ, মানুষকে ভুলে যায় সেখানে তিনি মনে করিয়ে দেন পৃথিবী এখনো বসবাসের যোগ্য, কারণ এমন মানুষ আছেন যারা হৃদয় দিয়ে অন্যের জন্য লড়াই করতে জানেন।
সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি একটু এগিয়ে আসে, তবে ক্ষুধার্ত পেট ও অনাহারে দিন কাটানো মানুষ আর  কোথাও থাকবে না।
এই গল্পটি শেয়ার করুন ছড়িয়ে দিন মানবিকতার বার্তা। কারণ কাজুলী বিশ্বাসের জন্ম যদি হয়, প্রতিটি ঘরে ঘরে, তবে পৃথিবী আরো সুন্দর হয়ে উঠবে, আরো বাসযোগ্য হয়ে উঠবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)