শরতের স্নিগ্ধ বাতাস, শিউলির গন্ধ, আর ভোরের আকাশে হালকা মেঘ—এই সবই বাঙালির মনে এক অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দেয়। এই অনুভূতিই হলো মহালয়া। এটি শুধু একটি তিথি নয়, এটি বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দন, দুর্গাপূজার আগমনী বার্তা। মহালয়া মানেই পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনা। এই দিনটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো ভোরে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কণ্ঠে "মহিষাসুরমর্দিনী" পাঠ। প্রায় ৯৩ বছর ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্য বাঙালির জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। রেডিওতে ভেসে আসা সেই মন্ত্র, স্তোত্র ও চণ্ডীপাঠের সুর কানে এলেই মনে হয়, মা দুর্গা সত্যিই আসছেন। এই সুর যেন সমগ্র বাঙালিকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলে, সে দেশের যেখানেই থাকুক না কেন।মহালয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো 'তর্পণ'। এই দিনে অনেকেই গঙ্গার ঘাটে বা জলাশয়ের ধারে গিয়ে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে জলদান করে থাকেন। এটি পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি পবিত্র আচার। এই তর্পণ নতুন উৎসবের আগে পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ গ্রহণের এক মাধ্যম। এছাড়াও, এই দিন থেকে দুর্গাপ্রতিমার চোখ আঁকার প্রথা শুরু হয়, যা 'চক্ষুদান' নামে পরিচিত। এই প্রতীকী কাজটি যেন প্রতিমার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে, দেবীর আগমনকে আরও বাস্তব করে তোলে।মহালয়া আসলে আনন্দ ও বিষাদের এক অনন্য মেলবন্ধন। একদিকে পিতৃপুরুষদের স্মরণ, অন্যদিকে দেবী দুর্গার আগমনীর উৎসব। তাই মহালয়া শুধু একটি উৎসবের সূচনা নয়, এটি বাঙালির জীবনে আবেগ, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির এক অবিস্মরণীয় দিন।
মহালয়ার আগমনীর সুর
By -
সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫
0
