ভারতের আলোকবর্তিকা অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান : দক্ষিণ দিনাজপুরের ' সুরহর ' এক গৌরবগাথা

Prathamalorbarta
By -
0

ভারতীয় ইতিহাসে এমন কিছু ব্যক্তিত্ব আছেন, যাদের আলোকচ্ছটা যুগযুগান্তর ধরে মানবসভ্যতার পথ আলোকিত করে রেখেছে। তাঁদেরই মধ্যে অন্যতম অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান — এক মহাপুরুষ, যিনি কেবল ধর্মীয় জ্ঞানের ধারক নন, বরং ছিলেন মানবতাবাদের এক অমল শিখা। তাঁর ত্যাগ, জ্ঞান, দয়া ও সহনশীলতা ভারতবর্ষকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল।


তবে দীর্ঘদিন ধরে ইতিহাসের নানা দলিল, প্রচলিত ধারণা ও পাণ্ডিত্যের প্রভাবে অতীশ দীপঙ্করের জন্মভূমি নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটেনি। কেউ বলেছেন তিনি বিক্রমপুরের সন্তান, কেউ বা অন্যত্র তাঁর জন্মভূমি নির্দিষ্ট করেছেন। কিন্তু ইতিহাসের এই গহীন অন্ধকারে এক নতুন আলোর দিশা দেখিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বরেণ্য ঐতিহাসিক অধ্যাপক হিমাংশু কুমার সরকার।


অধ্যাপক হিমাংশু কুমার সরকার তাঁর দীর্ঘ গবেষণা, তুলনামূলক বিশ্লেষণ ও প্রাচীন দলিলের আলোকে যুগান্তকারী এক ঘোষণা করেছেন—
> “অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান আমাদের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর ব্লকের সুরহর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।”

এই বক্তব্য কেবল এক ঐতিহাসিক দাবি নয়, এটি ভারতীয় ইতিহাসচর্চার গতিপথে এক বিপ্লব। অধ্যাপক সরকার প্রচলিত ধ্যানধারণা ও পূর্ববর্তী ইতিহাসচর্চার সীমারেখা ভেঙে নিজস্ব গবেষণার আলোয় প্রমাণ তুলে ধরেছেন যে অতীশ দীপঙ্করের শিকড় গভীরভাবে প্রোথিত আমাদের দক্ষিণ দিনাজপুরের মাটিতে।
তাঁর গ্রন্থ “ভারতের আলোকবর্তিকা অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান”–এ অধ্যাপক সরকার সুচারুভাবে উপস্থাপন করেছেন ঐতিহাসিক দলিল, প্রামাণ্য উপাখ্যান, প্রত্নতাত্ত্বিক ইঙ্গিত ও লোকজ ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে সুরহর অঞ্চল ছিল বৌদ্ধ দর্শন ও শিক্ষাচর্চার অন্যতম কেন্দ্র, এবং কীভাবে এখান থেকেই অতীশ দীপঙ্করের প্রজ্ঞা বিকশিত হয়েছিল।
ইতিহাস গবেষকদের প্রতি আহ্বান:-

এই নতুন আবিষ্কার ইতিমধ্যেই বহু ঐতিহাসিক ও গবেষকের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে। কেউ সমর্থন জানিয়েছেন, কেউ বা সংশয় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু অধ্যাপক হিমাংশু কুমার সরকার এই বিতর্কে পালিয়ে না গিয়ে, বরং এক সাহসী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন—

> “যদি কেউ মনে করেন আমার তথ্যভিত্তিক আবিষ্কার ভুল, তবে দলিলসহ প্রমাণ দিন। আলোচনা হোক, যুক্তি আসুক যুক্তির মুখে। আমি চাই সত্য ইতিহাসই জয়ী হোক।”

এই উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ নিঃসন্দেহে ভারতীয় ইতিহাসচর্চায় এক অনন্য উদাহরণ। কারণ ইতিহাস কখনো ব্যক্তির, গোষ্ঠীর বা রাজনীতির সম্পত্তি নয়; ইতিহাস হল সত্যের ধারক।

অধ্যাপক সরকারের গবেষণা ও বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিহাস অনুসন্ধান পরিষদ–এর পক্ষ থেকে সকল ঐতিহাসিক, গবেষক ও সমালোচকদের আন্তরিক আহ্বান জানানো হচ্ছে—

> “অযথা বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে, গুজব নয়, আসুন তথ্য ও যুক্তির মঞ্চে মুখোমুখি হই। অধ্যাপক হিমাংশু কুমার সরকারের গবেষণার আলোকে ইতিহাসের সত্যকে যাচাই করুন, আলোচনা করুন, প্রমাণ করুন বা খণ্ডন করুন।”

আজ যখন ইতিহাসকে নানা স্বার্থে বিকৃত করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন অধ্যাপক হিমাংশু কুমার সরকারের এই গ্রন্থ “ভারতের আলোকবর্তিকা অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান” আমাদের সামনে এক সত্যান্বেষী পথের দিশা দেখায়। তিনি শুধু একজন গবেষক নন—তিনি এক আলোকসন্ধানী, যিনি দক্ষিণ দিনাজপুরের মাটিকে অতীশ দীপঙ্করের আধ্যাত্মিক জন্মভূমি হিসেবে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে অগ্রসর হয়েছেন।

সত্যই বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, “ইতিহাস যদি সত্য না হয়, তবে সে কেবল রূপকথা।”

অধ্যাপক হিমাংশু কুমার সরকারের এই সাহসী গবেষণা সেই রূপকথাকে ইতিহাসে রূপান্তরিত করার এক অনন্য প্রয়াস। আসুন, তথ্যের আলোয় ইতিহাসের নতুন প্রভাত উদিত হোক। সুরহরের মাটি আবার জ্বলে উঠুক অতীশ দীপঙ্করের প্রজ্ঞার দীপশিখায়। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হোক ভারতের ইতিহাসে আলোকবর্তিকা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)